Top News

এনবিআরের হাতে শুল্ক–কর বাড়ানো–কমানোর ক্ষমতা থাকবে না >>>

 


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক ও করের হার বৃদ্ধি বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ, এনবিআর রাজস্ব সংক্রান্ত কোনো নীতি নির্ধারণের অধিকারী নয়। এনবিআরের মূল দায়িত্ব হলো রাজস্ব সংগ্রহ করা। রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্ত নীতি একটি পৃথক সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত হবে, যার নাম হতে পারে রাজস্ব নীতি কমিশন। এই সংস্থা বাজেটের অর্থবিলও প্রস্তুত করবে। প্রথমে নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা সরাসরি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) হাতে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।

সরকার গঠিত রাজস্ব খাত সংস্কার কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। রাজস্ব–সংক্রান্ত নীতি গ্রহণ এবং আদায় কর্তৃপক্ষ আলাদা করার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও আদায়, দুটি আলাদা কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে।

ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে অর্থ উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।

এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে জানান, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করার জন্য বিকল্প কিছু নেই। রাজস্ব আদায় এবং নীতি নির্ধারণের দুটি কর্তৃপক্ষ আলাদা করা হলে রাজস্ব আদায়ে গতি আসবে এবং হয়রানি কমে যাবে।


এনবিআর একটি রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা হলেও, স্বাধীনতার পর থেকে এটি শুল্ক ও কর বৃদ্ধির বা হ্রাসের নীতি গ্রহণ করে আসছে। শুল্ক ও কর সংক্রান্ত বাজেটের অংশও তারা প্রস্তুত করে, যা অর্থবিল হিসেবে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়।

কমিটির সুপারিশসমূহ


গত অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এনবিআরের সংস্কারের জন্য একটি পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করে। এই কমিটি রাজস্ব সংগ্রহ ও নীতি গ্রহণের বিষয়ে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।


কমিটির সুপারিশে যা আছে >>>


বর্তমানে এনবিআর আইআরডির অধীনে একটি সংস্থা হিসেবে কার্যরত। আইআরডির সচিব নিজেই এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, এনবিআরকে এখন থেকে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে পরিচালিত হতে হবে। এর নেতৃত্বে একজন সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা থাকবেন। এনবিআরের চেয়ারম্যান এনবিআরের কর্মীদের মধ্য থেকে নিয়োগ পেতে পারেন। এনবিআরের মূল দায়িত্ব হবে মাঠ পর্যায় থেকে শুল্ক ও কর সংগ্রহ করা।

অন্যদিকে, রাজস্ব নীতি কমিশনের অধীনে আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস সংক্রান্ত নীতির গ্রহণের ক্ষমতা স্থানান্তরিত হবে। এই কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন একজন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এখানে কাস্টমস, ভ্যাট, আয়করসহ রাজস্ব বিষয়ক অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি স্থায়ী উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে। এই পরিষদ বছরে অন্তত চারবার বৈঠক করে রাজস্ব নীতি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করবে।

এই কমিশন যে কোনো রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি গ্রহণ করবে, তা অবশ্যই ওই স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। জানা গেছে, বাজেটে শুল্ক ও কর সংক্রান্ত যে পরিবর্তনগুলি করা হয়, তা এতদিন এনবিআর পরিচালনা করত। পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করেছে যে, এখন থেকে এই দায়িত্ব কমিশন গ্রহণ করবে। এর ফলে, কমিশন অর্থবিলও প্রণয়ন করবে।


রাজস্ব মামলা ও মোকদ্দমার জন্য এনবিআরের অধীনে থাকা শুল্ক ও কর সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালগুলো ওই কমিশনের অধীনে চলে যাবে। পরামর্শক কমিটির সদস্যদের মতে, যিনি রাজস্ব সংগ্রহ করেন, তিনি রাজস্ব সংক্রান্ত বিরোধের বিচারক হতে পারেন না। এতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর সংস্কার সংক্রান্ত সরকারের গঠিত কমিটির একজন সদস্য, নাম প্রকাশ না করার শর্তে, প্রথম আলোকে জানান যে, যিনি রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্বে আছেন, তিনি (এনবিআর) করের নীতি গ্রহণ করলে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে করদাতাদের হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই দুটি আলাদা সংস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।


এই পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটির সকল সদস্যই এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা। সদস্যদের মধ্যে দুজন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এবং নাসিরউদ্দিন আহমেদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন (কর), ফরিদ উদ্দিন (শুল্ক) এবং আমিনুর রহমান (কর)।

এই পরামর্শক কমিটি এনবিআরের সংস্কারের জন্য সরকারকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব নীতি, রাজস্ব প্রশাসন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ও আধুনিকীকরণ, শুদ্ধাচার ও সুশাসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নীতিমালা তৈরি, নাগরিক যোগাযোগ এবং অংশীজনদের সম্পৃক্ততার কার্যক্রম, এবং রাজস্ব সংস্কারের সাথে সম্পর্কিত যেকোনো নীতিগত পরামর্শ।


পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুতের লক্ষ্যে, কমিটি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, সাধারণ করদাতা এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে এনবিআর সংস্কারে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়।


Post a Comment

Previous Post Next Post