ঢাকা–রাজশাহী পথে চলাচলকারী এই যাত্রীবাহী বাসটিতে গত সোমবার দিবাগত রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার সামনে.
ঢাকায় সুপারি ও খেজুরের গুড় বিক্রি করেন সোহাগ হোসেন (২৩) এবং ওমর আলী (৫২)। তাঁরা ১১ দিনে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে নাটোরের বড়াইগ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে গাবতলী থেকে বাসে উঠেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে চলন্ত বাসে তাঁদের সমস্ত জিনিসপত্র লুট করে নেয় একদল ডাকাত। বাসের অন্যান্য যাত্রীরাও ডাকাতদের কবল থেকে রক্ষা পাননি।
x
ইউনিক রোড রয়েলসের আমরী ট্রাভেলস নামের একটি বাস (নম্বর ময়নসিংহ-ব-১১-০০৬৯) ডাকাতির শিকার হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাসের দুই নারী যাত্রীকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, ডাকাতি হওয়া বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় পৌঁছানোর পর দুই নারী যাত্রী পুলিশে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। তবে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, নারী যাত্রীদের নির্যাতন বা ধর্ষণের বিষয়ে তাঁর কাছে কেউ কিছু জানাননি। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন, ওমর আলী, মজনু আকন্দ (৭৩) এবং তাঁদের ব্যবসায়িক সহযোগী আবু হানিফ বাসটি আটকানোর পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছেন। তাঁরা মামলা দায়ের করতে ইচ্ছুক। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি মির্জাপুর থানার আওতাধীন হওয়ায় সেখানেই মামলা দায়ের হবে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার সময় ওমর আলী প্রথম আলোকে জানান, ইতিমধ্যে নাটোরের পুলিশ সুপার তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছেন। তিনি শুনেছেন, মির্জাপুর থানার পুলিশ বড়াইগ্রাম থানার দিকে রওনা হয়েছে।
যাত্রীদের মতে, মঙ্গলবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ৪০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে একটি বাস রওনা হয়। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসটিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতির পর ডাকাতেরা বাসটিকে একই স্থানে ফিরিয়ে নিয়ে এসে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে নেমে যান। তখন যাত্রীরা বুঝতে পারেন যে, তাঁরা মির্জাপুর থানার একটি পেট্রলপাম্পের পশ্চিম দিকে অবস্থান করছেন। সেখানে বাসচালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজার গন্তব্যে যেতে নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন। তবে যাত্রীদের চাপের কারণে তাঁরা বাস ছাড়তে বাধ্য হন। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে যাত্রীদের চাপের কারণে বাসটি বড়াইগ্রাম থানায় প্রবেশ করে।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে সোহাগ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ার সময় পেছনের সিটে তিনজন ডাকাত উঠেছিলেন। বাসের যাত্রীদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে তারা কিছু দূর গিয়ে আরও পাঁচজনকে বাসে উঠান। এরপর ডাকাতদের একজন বাসের স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এই ডাকাতেরা একজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে, যার ফলে তাঁর সাদা জামা রক্তে ভিজে যায়। তখন ওই যাত্রী বিনা বাক্যে তাঁর টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে দেন। অপর একজনের হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়, যার ফলে তাঁর হাতের মাংস কেটে যায়। এই ভয়ে অন্যান্য যাত্রীরা নিজেদের কাছে থাকা সবকিছু দিয়ে দেন।
প্রত্যেক যাত্রীকে ডাকাতেরা পাঁচ থেকে সাতবার তল্লাশি করে উল্লেখ করে সোহাগ আলী জানান, তাঁকে একজন ডাকাত বাসের সিটের মাঝখানে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল। এই সময় তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার ওমর আলীর গলায় ছুরি ধরে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ওমর আলী এক লাখ টাকার বান্ডিলটি নিচে ফেলে দেন। পরবর্তী তল্লাশিতে ডাকাতেরা সেই টাকাও পেয়ে যায়। কোনো যাত্রীর মোবাইল ডাকাতেরা রেখে যায়নি, কেবল তাঁর ফোনটি নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে ডাকাতেরা তা বুঝতে পারেনি।